চীনে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
চলমান ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ দেশে আন্তর্জাতিক শিডিউল ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি কাজে নিয়োজিত যাত্রীদের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় রেখে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে চীনের গুয়াঞ্জু রুটে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিলো বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেবিচকের দায়িত্বশীল সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চীন রুটে ফ্লাইটের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বেবিচক চীনের অনুমোদিত গন্তব্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দিয়েছে। তবে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সবাইকে সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
বেবিচক জানায়, সম্প্রতি এ বিষয়ে আলোচনা করতে বেবিচক একটি সভা করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। সেখানে পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পসহ দেশে চলমান বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য চীনা নাগরিকদের নিয়মিত বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এ কারণে অনেকেই এ ফ্লাইটটি খোলা রাখার আবেদন করেন। তাই বেবিচক চীনে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে।
তবে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। বেবিচক জানিয়েছে, চীন থেকে আসা প্রত্যেককে সরকার নির্ধারিত হোটেল বা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নিজ খরচে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
ঢাকা থেকে চীন যাওয়ার সময় মাঝারি আকারের এয়ারক্রাফটে সক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন করা যাবে। তবে শেষের সারি ফাঁকা রাখতে হবে। বড় আকারের এয়ারক্রাফটে (মডেল ভেদে) সর্বোচ্চ ২৮০-৩২০ জন যাত্রী বহন করা যাবে।
চীন থেকে ঢাকায় ফেরার সময় মাঝারি আকারের এয়ারক্রাফটে সর্বোচ্চ ১০০ জন এবং বড় আকারের ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ১৫০ জন যাত্রী বহন করা যাবে।
প্রতিটি ফ্লাইটের ইকোনমি ক্লাসের ১টি সারি ও বিজনেস ক্লাসের একটি সিট ফাঁকা রাখতে বলা হয়েছে। ফ্লাইটে কোনো যাত্রীর করোনা সন্দেহ হলে তাকে ওই সিটে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বেবিচক।
এর আগে গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পুনরায় ফ্লাইট চালুর আবেদন জানায় চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। ফ্লাইট চলাচল শুরু না হলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হতে পারে বলে মনে করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআরইসি জানায়, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ একটি যৌথ প্রকল্প। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে। ফলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ৩০ জন ব্যক্তিকে প্রতি সপ্তাহে চীনে যাতায়াত করতে হয়। তাদের মধ্যে প্রকল্প পরিচালক, নিরাপত্তা, মান যাচাই ও কারিগরি নির্মাণ কর্মকর্তারা রয়েছেন।
প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, করোনার জন্যে প্রকল্প পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও সাইটের শ্রম ব্যবস্থাপনা ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন ফ্লাইট স্থগিত করার ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি আরও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি চীন থেকে নির্মাণ স্থানে সময়মতো ফিরতে না পারেন, তবে বেশ কয়েকটি কাজ বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। কিছু কাজ বাধ্য হয়ে স্থগিত করতে হবে। যা নির্মাণ কাজের অগ্রগতিতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চীন থেকে যেসব কর্মী বাংলাদেশে এসেছেন তারা সবাই দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। ফলে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে তারা ঝুঁকি তৈরি করবেন না। সরকার যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ফিরে আসা চীনা কর্মীদের জন্য নির্ধারিত স্থানে সেন্ট্রালাইজড কোয়ারেন্টাইনের নীতিমালা তৈরি করে, তবে তারা আর বাংলাদেশে আসতে চাইবেন না। এই বিষয়গুলো প্রকল্পের অগ্রগতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় প্লেন চলাচল স্থগিত করা হয়। ফলে চট্টগ্রামে প্রকল্পের জন্য অর্ডার করা ইস্পাত বিম, ইস্পাত বার ও বিভিন্ন সামগ্রী বহনকারী নৌযানের জট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও উচ্চ পোর্ট ডেমারেজ ফি, অতিরিক্ত পোর্ট স্টোরেজ চার্জ ও জ্বালানি চার্জের কারণে প্রকল্পের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। ইস্পাত বিম, রেল ও অন্যান্য জিনিসপত্র আসতে বিলম্বিত হচ্ছে। যা প্রকল্পের সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।
এদিকে গত ১৭ এপ্রিল থেকে দুবাই, মাস্কাট, দোহা ও সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা। স্বাস্থ্য সতর্কতার অংশ হিসেবে সব ফ্লাইট ঢাকা থেকে পরিচালিত হচ্ছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সব নির্দেশনা মেনে সপ্তাহে ৯টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দুবাই, ৭টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে মাস্কাট, ৪টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দোহা ও একটি করে ফ্লাইট ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরে পরিচালনা করছে।
সরকারের নির্দেশনায় সব আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টা আগে কোভিড-১৯ এর নেগেটিভ সার্টিফিকেট সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্য থেকে যেসব যাত্রী দেশে আসবেন প্রত্যেককেই সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা হোটেলে কোয়ারেন্টাইন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাত্রীদের এসব মেনে ফ্লাইটে ওঠার নির্দেশনা দিয়েছে এয়ারলাইন্সটি।
বিশেষ ফ্লাইট সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সেলস্ অফিস, নিকটস্থ ট্রাভেল এজেন্সি, ০১৭৭৭৭৭৭৮০০-৮০৬ অথবা ১৩৬০৫ নম্বরে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করেছে তারা।
গত ১৫ এপ্রিল রাতে এক ভার্চুয়াল সভায় এয়ারলাইন্সগুলোকে মধ্যপ্রাচ্যের ৪ দেশ ও সিঙ্গাপুরে সপ্তাহে ১০০-এর বেশি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় বেবিচক।